ফ্রিল্যান্সিং এর নামে প্রতারণা থেকে বাঁচতে যা জানা জরুরি!

ফ্রিল্যান্সিং এর নামে প্রতারণা থেকে বাঁচতে যা জানা জরুরি!

ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য আয়ের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ঘরে বসে বৈশ্বিক বাজারে কাজ করার সুযোগ, স্বাধীনভাবে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা। এসব কারণে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

কিন্তু এই জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে প্রতারকরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভুয়া ট্রেনিং সেন্টার, নকল ক্লায়েন্ট, লোভনীয় অফারের ফাঁদ। এসবের কারণে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আপনি যদি এই প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে চান, তাহলে কীভাবে নিরাপদ থাকবেন? আসুন, বিস্তারিত জেনে নিই।

ফ্রিল্যান্সিং প্রতারণা কী এবং কেন এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে?

ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে অনেক প্রতারক বিভিন্ন উপায়ে নতুনদের ঠকানোর চেষ্টা করছে। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে নতুন এবং এই প্ল্যাটফর্মগুলোর কাজের ধরন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না, তারা সহজেই প্রতারণার শিকার হতে পারেন। প্রতারণার সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মানুষের দ্রুত অর্থ উপার্জনের আকাঙ্ক্ষা এবং সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব। অনেক প্রতারক বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে, যেমন – “মাত্র এক মাসের ট্রেনিংয়ে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম!”, “কোনো স্কিল ছাড়াই মাসে লাখ টাকা আয় করুন!” ইত্যাদি।

এই ধরনের প্রতারণা সাধারণত দুটি বড় ভাগে বিভক্ত। একদল লোক নতুনদের ভুল প্রশিক্ষণ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়, অন্যদল ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে নকল ক্লায়েন্ট বা কাজের অফার দিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতারণা করে। ফলে, একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার যখন সঠিক দিকনির্দেশনা ছাড়া এই জগতে প্রবেশ করেন, তখন তারা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ভুয়া ট্রেনিং সেন্টার এবং কোর্স প্রতারণা

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর নামে অনেক ভুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যারা বাস্তবে কার্যকর কোনো শিক্ষা না দিয়ে শুধুমাত্র ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে কোর্স পরিচালনা করছে। এদের বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণত খুবই আকর্ষণীয় হয়, যেখানে বলা হয় যে মাত্র এক মাসের মধ্যেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে হাজার হাজার ডলার আয় করতে পারবেন। বাস্তবে, ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে হলে ধাপে ধাপে দক্ষতা অর্জন করতে হয় এবং অনেক অনুশীলনের দরকার হয়।

See also  ফ্রিল্যান্সার ডটকম এ সফলতার কৌশল। freelancer.com

এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হন, কারণ তারা সঠিক গাইডলাইন পান না, এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠান কোর্স শেষে কোনো ধরনের সাপোর্টও দেয় না। তাই ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগে অবশ্যই রিভিউ দেখে এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। YouTube বা বিনামূল্যে অনলাইন রিসোর্স থেকেও অনেক ভালো মানের শিক্ষা পাওয়া সম্ভব, তাই কোথাও ভর্তি হওয়ার আগে যাচাই করা জরুরি।

ভুয়া ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সিং সাইটে প্রতারণা

শুধু ট্রেনিং প্রতারণা নয়, অনেক সময় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মেও প্রতারকদের খপ্পরে পড়তে হয়। বিশেষ করে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা সহজেই এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন। অনেক ক্লায়েন্ট কাজ করিয়ে নেয়ার পর পেমেন্ট করেন না বা অগ্রিম পেমেন্টের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়।

উদাহরণস্বরূপ, কিছু প্রতারক ক্লায়েন্ট নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কাছে অগ্রিম কিছু টাকা দাবি করে, যেখানে বলা হয় যে, “আপনার একাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য আপনাকে $১০ পাঠাতে হবে, তারপর কাজ পাবেন।” বাস্তবে, কোনো স্বনামধন্য মার্কেটপ্লেসে এমন নিয়ম নেই। আবার, কিছু প্রতারক ভুয়া চেক বা ফেক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের ঠকিয়ে থাকে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে সবসময় বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা জরুরি। Upwork, Fiverr, Freelancer, Toptal-এর মতো নির্ভরযোগ্য মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করলে প্রতারণার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া, ক্লায়েন্টের প্রোফাইল ভালোভাবে যাচাই করা, পূর্বের রিভিউ দেখা এবং সন্দেহজনক অফার এড়িয়ে চলা উচিত।

ভুয়া পেমেন্ট এবং লোভনীয় অফারের ফাঁদ

ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রতারণার আরেকটি বড় দিক হলো ভুয়া পেমেন্ট বা লোভনীয় অফারের ফাঁদ। অনেক প্রতারক ক্লায়েন্ট নতুন ফ্রিল্যান্সারদের বলে যে তারা এক মাসের মধ্যে বড় অঙ্কের কাজ দিতে চায়, কিন্তু এর জন্য কিছু অ্যাডভান্স চার্জ দিতে হবে। এই ধরনের প্রস্তাব সবসময়ই সন্দেহজনক। প্রকৃত ক্লায়েন্ট কখনো ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে টাকা চায় না, বরং কাজ শেষ হলে পেমেন্ট দেয়।

See also  নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সেরা মার্কেটপ্লেস কোনটি? কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত?

অনেক ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “ফ্রিল্যান্সিং জব অফার” নামে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে কাজ খুঁজে থাকেন, যা সবসময় নিরাপদ নয়। কোনো কাজ পেতে হলে সরাসরি নির্ভরযোগ্য মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমেই লেনদেন করা উচিত, যেখানে পেমেন্ট সিকিউরড থাকে।

ফ্রিল্যান্সিং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

ফ্রিল্যান্সিং প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা দরকার।

১. প্রথমেই সঠিক দক্ষতা অর্জন করুন – স্কিল ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা মানে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। আগে ভালোভাবে নির্দিষ্ট একটি দক্ষতা অর্জন করুন এবং পর্যাপ্ত অনুশীলন করুন।
২. কোর্স বা প্রশিক্ষণ নিলে যাচাই করুন – কোনো প্রতিষ্ঠানে কোর্স করার আগে তাদের পুরোনো শিক্ষার্থীদের রিভিউ দেখুন এবং প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
3. কেবলমাত্র বিশ্বস্ত মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করুন – Fiverr, Upwork, PeoplePerHour-এর মতো স্বীকৃত ও নিরাপদ মার্কেটপ্লেসে কাজ করুন।
4. অগ্রিম টাকা লেনদেন থেকে দূরে থাকুন – কোনো ক্লায়েন্ট যদি আগেভাগে টাকা চায় বা কোনো কাজ পাওয়ার জন্য টাকা দিতে বলে, তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই প্রতারণা।
5. ক্লায়েন্টের প্রোফাইল যাচাই করুন – মার্কেটপ্লেসে কোনো ক্লায়েন্টের কাজের ইতিহাস, ফিডব্যাক এবং পেমেন্ট ভেরিফিকেশন স্ট্যাটাস দেখুন।
6. সন্দেহজনক অফার এড়িয়ে চলুন – যদি কোনো অফার খুব বেশি লোভনীয় মনে হয়, তাহলে সেটি প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে।

উপসংহার

ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, তবে এর সাথে সাথে প্রতারণার ঘটনাও বেড়েছে। যারা এই জগতে নতুন, তাদের অবশ্যই প্রতারণার বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সঠিক স্কিল অর্জন, নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার এবং সন্দেহজনক অফারগুলো এড়িয়ে চললে প্রতারণার সম্ভাবনা কমবে। স্মার্ট ও সাবধানী হলে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে সত্যিকার অর্থেইস্বাধীনভাবে আয়ের একটি কার্যকর মাধ্যম। তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে প্রথমেই সচেতনতা জরুরি!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top